আ হ জুবেদঃ আরব দেশের মানুষরা ধর্মে-কর্মে জিরো, বাংলাদেশের মানুষরা ধর্মে-কর্মে হিরো।
ত্যাগের মহিমার কথা স্মরণ করে সারা বিশ্বের মুসলিমরা জিলহজ মাসের ১০ তারিখে আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের প্রত্যাশায় পশু কোরবানি করে থাকেন।
কোরবানির সূচনা হয় মানবজাতির আদি পিতা হজরত আদম (আ.) এর যুগ থেকে। দুনিয়ার প্রথম মানব হজরত আদম (আ.)-এর সন্তান হাবিল-কাবিলের মধ্যে বিবাহ নিয়ে দ্বন্দ্ব দেখা দিলে হজরত আদম (আ.) তাদের দ্বন্দ্ব নিরসনের মানসে উভয়কে ইখলাসের সঙ্গে কোরবানি করার নির্দেশ প্রদান করেন। অতঃপর মহান রাব্বুল আলামিন তাকওয়ার ভিত্তিতে হাবিলের কোরবানি কবুল করলেন এবং কাবিলের কোরবানি প্রত্যাখ্যান করলেন।
পরবর্তীতে মুসলিম জাতির পিতা হজরত ইবরাহিম (আ.) খোদাপ্রেমের নিদর্শন ও পরীক্ষা স্বরূপ মিনার প্রান্তরে তাঁর কলিজার টুকরা সন্তান ইসমাঈল (আ.) এর গলায় ছুরি চালিয়ে ত্যাগ ও ভালোবাসার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। বিশ্বময় রচিত হলো কোরবানির নতুন ইতিহাস।
দীর্ঘদিন ধরে আরব দেশে থাকার সুবাদে আরব বিশ্বের মানুষের চরিত্র, ঐতিহ্য ও ধর্মপালন স্বচক্ষে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে।
পশু কোরবানির প্রচলন শুরু পর থেকে আরব বিশ্ব সঠিক নিয়মানুসারে পশু কোরবানি দিলেও বাংলাদেশে এই প্রচলনের বিরাট নেতিবাচক পরিবর্তন ঘটেছে।
সাধারণত দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে প্রতি বছর প্রচুর গরু কোরবানি দেওয়া হয়। তবে সবচেয়ে বেশি কোরবানি দেওয়া হয় সম্ভবত বাংলাদেশেই। আর একটি গরু একা যেমন কোরবানি দেওয়া যায়, আবার সাত ভাগ করে সাতজন মিলেও দেওয়া যায়।
যথারীতি উট ও মহিষের ক্ষেত্রে একই নিয়মের কথা ধর্ম ধর্মগ্রন্থে বলা হয়েছে।
অন্যদিকে ছাগল, দুম্বা ও ভেড়া এসব পশু একজনই কোরবানি দিতে পারে।
উপরোক্ত বিষয়ে বাংলাদেশের সমসাময়িক চিত্র ও সংখ্যাধিক মানুষের কোরবানির নিয়মনীতি রীতিমতো ভাবিয়ে তুলেছে।
বাংলাদেশে বৃহৎ একটি অংশের মানুষের গরু কোরবানি বিষয়ে নিজেদের আর্থিক ক্ষমতার দাপট আর
সামাজিক ক্ষেত্রে প্রতিযোগী দৃষ্টিভঙ্গিতে অধিকমূল্যে গরু কোরবানি বেশ দৃশ্যমান।
বাধা নিষেধ নেই, যদি এক পরিবারে একের অধিক গরু কোরবানি দেয়া হয়, তবে পরিবারের সদস্য অনুপাতে গরু কোরবানিসহ ইত্যাদি অযৌক্তিক কারণ অনেকেই বলে থাকেন।
কিন্তু এবিষয়ে আদি ইতিহাস কী বলে, সেদিকে কারো দৃষ্টি নেই।
মূলত, দক্ষিণ এশিয়ার এদেশটির মানুষের দীর্ঘদিনের চরিত্র ঠিক এরকম যে, ফরজ ইবাদত নিয়ে খুবেকটা মাথাব্যথা নেই, কিন্তু সুন্নত ইবাদত পালন নিয়ে রীতিমতো ঝগড়া-বিবাদ ও বিদাতে লিপ্ত হয়ে পড়েন।
দীর্ঘদিন ধরে আরব বিশ্বের মানুষের চরিত্র, ঐতিহ্য ও ধর্মপালন স্বচক্ষে দেখছি, কিন্তু একটা বিষয়েও আমাদের বাংলাদেশের মানুষের সাথে আরব জাতির মিল খুজে পেলাম না।
তাই বলতে বাধ্য হচ্ছি যে, আরব দেশের মানুষরা ধর্মে-কর্মে জিরো, বাংলাদেশের মানুষরা ধর্মে-কর্মে হিরো।